রেফারির সামনেই এত অনিয়ম বিশ্বকাপে!

রাশিয়া বিশ্বকাপের শুরু থেকেই চলে আসছে রেফারিং নিয়ে বিতর্ক। বেশ কিছু ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্ত নিয়ে চরম বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। শেষ ষোলোর লড়াই শুরু হতে না হতেই নতুন এক বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। সেটা হলো টাইব্রেকার বিতর্ক। গত রবিবার রাতের দুটি ম্যাচেই যে ১৯টি পেনাল্টি কিক নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ১৫টি কিক নেওয়ার আগেই গোলকিপাররা গোল লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। যা সম্পূর্ণ অবৈধ!

প্রথম ম্যাচে রাশিয়ার ইগর আকিনফেভ এবং ক্রোয়েশিয়ার দানিয়েল সুবাসিচ দলকে জিতিয়ে জাতীয় নায়ক হয়ে গেছেন। ডেনমার্কের ক্যাসপার স্কেমিশেল শেষ পর্যন্ত দলকে না জেতাতে পারলেও তাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত অনেকেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই তিন গোলকিপারই টাইব্রেকারের সময় নিয়ম ভেঙেছেন। যে ১৫টি কিকের সময় গোলকিপাররা লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন, তার মধ্যে ৭টি বাঁচাতে সক্ষম হয়েছেন তারা। সুবাসিচ এবং স্কেমিশেলই নিয়ম ভেঙেছেন বেশি। একটি মাত্র কিক বাদে বাকি সবকটি কিক নেওয়ার সময় গোললাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন তারা।

স্পেনের ডেভিড ডি গিয়া একবারই মাত্র লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু তিনি ওই কিক বাঁচাতে পারেননি। স্কেমিশেল আবার শুধু টাইব্রেকারের সময়ই নয়, ম্যাচ চলাকালীন ক্রোয়েশিয়া যখন পেনাল্টি পায়, তখনও একই কাজ করেছিলেন। লুকা মদ্রিচের মারা কিক তিনি বাঁচিয়ে দেন ঠিকই, কিন্তু পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, লাইন ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন ডেনমার্কের গোলকিপার।

ফিফার আইনে পরিষ্কার লেখা আছে, ‘পেনাল্টি কিক নেওয়ার সময় গোলকিপারদের গোল লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে কিকারদের দিকে মুখ করে। যতক্ষণ পর্যন্ত না কিক নেওয়া হচ্ছে, গোলকিপারদের গোল লাইনেই দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। কিক নেওয়ার পরে তারা এগিয়ে যেতে পারে।’

কিন্তু দেখা গেছে, আইনকে অগ্রাহ্য করেই কিক নেওয়ার আগে গোলকিপারেরা এগিয়ে গেছেন। এ ক্ষেত্রে রেফারিদের উচিত ছিল, কিকটিকে বাতিল করে নতুন করে কিক নেওয়ার জন্য বলতে। কিন্তু রেফারিরা এ সব কিছুই করেননি। প্রশ্ন উঠছে, এতগুলো ঘটনা কী ভাবে রেফারিদের চোখ এড়িয়ে যেতে পারে?

ফিফার নিয়মাবলিতে আরও বলা আছে, গোলকিপার যদি এভাবে আইন ভাঙেন, তাহলে রেফারি তাকে হলুদ কার্ড দেখাতে বাধ্য। অনূর্ধ্ব-১৭ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে এই অপরাধের জন্য কার্ড দেখেছিল আয়ারল্যান্ডের গোলকিপার। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড হওয়ায় তাকে মাঠ ছাড়তে হয়। টাইব্রেকারের সময় তাই গোলকিপারের বদলে অন্য পজিশনের ফুটবলারকে গোলকিপিং করতে হয়। সেই ম্যাচ হেরে যায় আয়ারল্যান্ড।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ভিডিয়ো প্রযুক্তির (ভিএআর) সাহায্য নিয়ে নানা ক্ষেত্রে পেনাল্টি দিয়েছেন রেফারিরা। কিন্তু সমস্যা হল, টাইব্রেকারের সময় ‘ভিএআর’ ব্যবহার করার কোনো ব্যবস্থা নেই। যার ফলে পুরোটাই নির্ভর করছে ওই মুহূর্তে রেফারির সিদ্ধান্তের ওপর। কিন্তু রেফারি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রশ্ন উঠেছে, বিশ্বকাপের বাকী ম্যাচগুলোতেও কি এমনই অনিয়মের শিকার হতে হবে দলগুলোকে?